খাদ্য ও পুষ্টি পর্ব ১

খাদ্য ও পুষ্টি (পর্ব – ১)

খাদ্য ও পুষ্টি নিয়ে আলোচনা (পর্ব – ১)

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আমরা শুরু করতে যাচ্ছি খাদ্য ও পুষ্টির বিস্তারিত আলোচনা।

আমাদের এর আগে আলোচ্য বিষয় ছিল রক্তের বিস্তারিত, যারা পড়েনি তারা এখানে ক্লিক করে পড়ে আসতে পারেন।

এখন আমাদের আজকের বিষয় নিয়ে শুরু করি।

খাদ্য ও পুষ্টি

খাদ্য ছাড়া আমরা বাচতে পারি না। দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয় পূরণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সব কিছু খাদ্যের মাধ্যমে হয়। আমাদের স্বাস্থ্য নির্ভর করে আমরা যে খাদ্য খাচ্ছি তার পুষ্টির উপর। আমাদের শরীরে খাদ্যের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। খাদ্যের প্রভাবে আমাদের স্বাস্থ্য, চেহারা, কাজ কর্ম, আচরণ, কার্য ক্ষমতা, জীবন ধারনের মান সহ নানা কাজে প্রভাব ফেলে থাকে। খাদ্য এক জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের শক্তি প্রধান করে থাকে। যা নিয়ে আমরা একটু পর বিস্তারিত জানবো।

আরো পড়ুনঃ

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)

খাদ্য কি?

সাধারণ ভাবে আমরা যা কিছুই খাই তাই খাদ্য হিসেবে জানি বা বুজি। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে খাদ্যের সংজ্ঞা ভিন্ন।

পুষ্টি বিজ্ঞানের ভাষায় যেসব আহার্য বস্তু আমাদের ক্ষয় পূরণ ও জীবদেহে শক্তি উৎপাদন ও বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ করে তাই খাদ্য।

পুষ্টি কি?

আমরা খাদ্য গ্রহণ করার পর সে সব খাদ্য বস্তুকে শোষণ ও পরিপাক করে আত্তীকরণের মাধ্যমে শোষণ ও পরিপাক করার পর যে শক্তি পাওয়া যায় তার মাধ্যমে দেহের শক্তি চাহিদা পূরণ, রোগ প্রতিরোধ ও ক্ষয় পূরণ করে তাই পুষ্টি।

খাদ্যের কাজঃ

খাদ্যের অনেক কাজ হলে প্রধান কাজ তিনটি।

১. খাদ্য দেহের গঠন, বৃদ্ধিসাধন, ক্ষয়পূরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে।

২. খাদ্য দেহে কর্মশক্তি প্রদান করে ও তাপ উৎপাদন করে।

৩. খাদ্য রোগ প্রতিরোধ করে, দেহকে সুস্থ, সবল এবং কর্মক্ষম রাখে।

খাদ্যের উপাদানঃ

বিষয় বস্তু বিবেচনা করে খাদ্যের উপাদানকে দুই ভাবে ভাগ করা যায়।

১. মুখ্য উপাদান

২.সহায়ক উপাদান

১.মুখ্য উপাদান

খাদ্যের মুখ্য উপাদানে রয়েছে তিনটি উপাদান

ক. শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট

খ. আমিষ বা প্রোটিন

গ. স্নেহ বা লিপিড

ক. শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট

মানুষের প্রধান খাদ্য হচ্ছে শর্করা। তিনটি উপাদান দিয়ে শর্করা তৈরি। তিনটি উপাদান হলো কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন। কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দিয়ে তৈরি বলে একে কার্বোহাইড্রেট ও বলা হয়। শর্করার কোনো প্রকার বর্ণ ও গন্ধ নেই, কিন্তু স্বাদ সামান্য মিষ্টিযুক্ত।

উৎস অনুযায়ী শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট দুই প্রকার।

১. উদ্ভিজ উৎস

২. প্রাণিজ উৎস

১. উদ্ভিজ উৎস

যেসব শর্করা উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায় তাই হলো উদ্ভিজ শর্করা । বিভিন্ন কিছু শর্করা পর্যালোচনা করে বুজা যায় যে উদ্ভিজ শর্করা ৫ প্রকার।

ক. শ্বেতসার বা স্টার্চ

খ. গ্লুকোজ

গ. ফ্রুকটোজ

ঘ. সুক্রোজ

ঙ. সেলুলোজ

আরো পড়ুনঃ

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-৩)

ক. শ্বেতসার বা স্টার্চ

শ্বেতসারের প্রধান উৎস হচ্ছে ধান, গম, ভুট্টা এবং অন্যান্য শস্য দানা। এছাড়া রাঙা আলু, আলু, কচুতেও শ্বেতসার বা স্টার্চ পাওয়া যায়।

খ. গ্লুকোজ

এটি মিষ্টি জাতীয় শর্করা। কিন্তু চিনির তুলনায় মিষ্টি কম। এটি আপেল, খেজুর, গাজর, আঙুর ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।

গ. ফ্রুকটোজ

ফ্রুট থেকে ফ্রুক্টোজ নাম টি এসেছে। বেশিরভাগ ফলে এ শর্করার উপস্থিতি আছে বলেই একে ফ্রুকটোজ বা ফল শর্করা বা (Fruit Sugar) বলা হয়। আম, পেপে, কমলালেবু, কলা সহ বেশিরভাগ ফল এবং ফুলের মধুতে ফ্রুকটোজ থাকে।

ঘ. সুক্রোজ

চিনি, আখ, আখের গুড় এর প্রধান উৎস

ঙ. সেলুলোজ

সকল প্রকার শাক – সবজিতে সেলুলোজ থাকে।

২. প্রাণিজ উৎস

যে সব শর্করা প্রাণী থেকে পাওয়া যায় তাই প্রাণিজ শর্করা। বৈশৃষ্ট গত ভাবে প্রানিজ শর্করা ২ প্রকার।

ক. ল্যকটোজ

খ. গ্লাইকোইজেন

ক. ল্যাকটোজ

একে দুধ শর্করাও বলে থাকে। গরু, ছাগল ও অন্যান্য প্রাণির দুধে এই শর্করা পাওয়া যায়।

খ. গ্লাইকোজেন

পশু ও পাখি জাতিয় (মুরগী, কবুতর) প্রাণীর যকৃত, মাংশে এই শর্করা পাওয়া যায়।

আরো পড়ুনঃ

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-৩)

খ. আমিষ বা প্রোটিন

শর্করা যেমন কার্বন হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দিয়ে তৈরি, ঠিক তেমন আমিষ বা প্রোটিন কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন দিয়ে তৈরি। মূলত পক্ষে আমিষ এমাইনো এসিড তৈরি করে। অর্থাৎ আমিষ পরিপাক হওয়ার পর অ্যামাইনো এসিডের রূপান্তরিত হয়ে যায়। অ্যামাইনো এসিড সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হবে তার আগে আমরা জেনে নিই আমিষ কয় প্রকার বা উৎস অনুযায়ী আমিষ কে কয় ভাগে ভাগ করা যায়। উৎস অনুযায়ী শর্করার মতো আমিষ ও দুই প্রকার।

১. উদ্ভিজ্জ উৎস

২. প্রাণিজ উৎস

১. উদ্ভিজ্জ উৎস

যেসব আমিষ উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায় সে সকল আমিষ কে উদ্ভিজ আমিষ বলা হয়। ডাল, শিমের বিচি, বাদাম, মটরশুঁটি এইগুলো উদ্ভিজ্জ আমিষের উদাহরণ।

২. প্রাণিজ উৎস

যেসব আমিষ প্রাণী থেকে পাওয়া যায় সে সকল আমিষ কে প্রাণিজ আমিষ বলা হয়। মাছ, মাংস, দুধ ডিম, ছানা, পনির এইগুলো প্রাণিজ আমিষের উদাহরণ।

অ্যামাইনো এসিড

মানবদেহে ২০ ধরনের অ্যামাইনো এসিড এর সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৮ টি অ্যামাইনো এসিড অপরিহার্য। এই আট টি কে অপরিহার্য অ্যামাইনো এসিড বলা হয়। প্রাণিজ প্রোটিন এই আটটি অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায় বলে প্রাণিজ প্রোটিনের পুষ্টি মূল্য বেশি। উদ্ভিজ উৎসের মধ্যে ডাল, সোয়াবিন, মটরশুটিতে এই অপরিহার্য অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায় বলে এদের পুষ্টি মুল্য বেশি।

প্রাণি দেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমিষ বা প্রোটিন। আমাদের দেহ কোষের বেশিরভাগ প্রোটিন দিয়ে তৈরি। আমাদের হাড়, পেশি, নখ, লোম, পাখির পালক, পশুর শিং আমিষ তথা প্রোটিন দিয়ে তৈরি। এমনি আমাদের শুষ্ক ওজনের ৫০% প্রোটিন দিয়ে তৈরি।

আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি। আগামি পর্বে স্নেহ বা লিপিড সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। বিজ্ঞানের নিত্য নতুন আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ। আসসালামু আলাইকুম।

খাদ্য ও পুষ্টি এর পরবর্তী পর্ব

২য় পর্ব

পূর্বের পোস্টঃ

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-৩)

Leave a Reply

Shopping cart

0
image/svg+xml

No products in the cart.

Continue Shopping