রক্তের বিস্তারিত (পর্ব-৩)

রক্তের বিস্তারিত (পর্ব-৩) Blood Details ( Bangla Part-3)

হৃদপিণ্ড কিভাবে রক্ত সঞ্চালন করে
রক্তের খুটিনাটি পর্ব-৩

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আমরা আমাদের রক্তের বিস্তারিত এর তৃতীয় পর্বে চলে এসেছি। যারা ১ম পর্ব পড়েনি তারা এখানে ক্লিক করুন। যারা ২য় পর্ব পড়েনি তারা এখানে ক্লিক করুন।

১ম পর্ব

২য় পর্ব

গত ২ পর্বে রক্তের উপাদান, রক্তরস,রক্তকণিকা,রক্তের গ্রুপ,Rh ফ্যক্টর এবং রক্তের বাহক সম্পর্কে সামান্য জেনেছিলাম। এই পর্বে রক্তের বাহকের বাকি অংশ হতে শুরু করবো।

গত পর্বে রক্তের বাহকের মধ্যে ধমনি সম্পর্কে জেনেছিলাম। এই পর্বে শিরা থেকে শুরু করবো।

শিরা

যা সারাদেহের বাহিত রক্ত হৃদপিন্ডে নিয়ে আসে তাই শিরা। সারাদেহে অনেক সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম শিরা আছে। যাদের কাজ হচ্ছে রক্তকে হৃদপিন্ডে ফেরত নিয়ে আশা।

ধমনির মতো শিরার প্রাচীর ৩টি স্তরে গঠিত। কিন্তু শিরার প্রাচীর ধমনীর প্রাচীর থেকেও পাতলা। এদের প্রাচীর পাতলা হওয়ায় এরা সরু নয়। এদের গহব্বরটি বড়। ধমনিতে কপাটিকা না থাকলে ও শিরাতে কপাটিকা থাকে। যার ফলে রক্ত একমুখী ভাবে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়।

সাধারণত শিরা সারা দেহ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড যুক্ত রক্ত হৃদপিন্ডে পরিবহন করে নিয়ে যায়।

কিন্তু ধমনির মতো এর ও একটি ব্যাতিক্রমধর্মী শিরা আছে, যাকে পালমোনারি শিরা বলে। এ শিরা ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত হৃদপিন্ডে পরিবহন করে।

কৈশিক জালিকা

ধমনি ও শিরার মধ্যস্থল বা সংযোগস্থল হচ্ছে কৈশিক জালিকা। অন্যভাবে পেশিতন্তুতে চুলের মতো সুক্ষ্ম যে রক্ত নালী দেখা যায় তাই কৈশিক জালিকা। এর এক পাশে রয়েছে ধমনি এবং অন্য পাশে শিরা।

রক্তের মধ্যে পুষ্টিদ্রব্য,অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড,রেচন পদার্থ ব্যাপন আদান প্রধানের মাধ্যম হল কৈশিক জালিকা।


হৃদপিন্ড
|
ধমনি
|
কৈশিক জালিকা
|
শিরা
|
হৃদপিন্ড

হৃদপিন্ড

রক্ত সংবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে হৃদপিন্ড। এটাকে ইংরেজিতে হার্ট (Heart) বলে। হৃদপিন্ড হচ্ছে একধরনের পাম্প। মানবশরীরের ভিতর যা রক্ত পাম্প ও পরিশোধিত করে তাই হৃদপিন্ড। হৃদপিন্ড অনবরত সংকোচন প্রসারণ হয়, এই সংকোচন ও প্রসারনের ফলে সারা দেহে রক্ত চলাচল বা সঞ্চাচলন হয়।
( হৃদপিণ্ড কিভাবে রক্ত সঞ্চালন করে )
এর অবস্থান মানুষের বুকের ফুসফুস দুইটির মাঝে এবং মধ্যচ্ছদার উপরে। হৃদপিন্ড এক পাশ প্রশস্ত, অন্য পাশ সুচালো। প্রশস্ত প্রান্তি উপরের এবং সুচালো প্রান্তটি নিচের দিকে অবস্থিত।

হৃদপিন্ড এ দ্বিস্তরী পেরিকার্ডিয়াম দ্বারা বেষ্টিত। এই দুই স্তরের মাঝে পেরিকার্ডিয়াল ফ্লুইড থাকে যা হৃদপিন্ডকে সংকোচনে সহায়তা করে। মানুষের হৃদপিন্ডে চারটি কপাট বা প্রকোষ্ঠ থাকে । উপরের দিকের প্রকোষ্ঠকে ডান ও বাম অলিন্দ বলে। আর নিচের গুলো কে ডান ও বাম নিলয় বলে।

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)

অলিন্দগুলো পাতলা হলেও নিলয় গুলো পুরু ও পেশিবহুল। ঊর্ধ্ব মহাশিরা ও নিম্ন মহাশিরা ডান অলিন্দের সাথে যুক্ত থাকে। চারটি পালমোনারি ধমনি যুক্ত থাকে বাম অলিন্দে।

ফুসফুসীয় ধমনি যুক্ত থাকে ডান নিলয়ে এবং মহাধমনি উৎপত্তি হয়েছে বাম নিলয় থেকে।

হৃদপিন্ডের কাজ

আমরা জানি যে হৃদপিন্ড অনবরত সংকোচন ও প্রসারণ হতে থাকে। এই সংকোচন ও প্রসারনের মাধ্যমে রক্ত সারা দেহে প্রবাহিত হয়। হৃদপিন্ড সংকোচন ও প্রসারণকে হার্টবিট বা হৃদস্পন্দন বলে।

হৃদপিন্ড মায়োজনিক অর্থাৎ বাহিরের কোন সাড়া ছাড়া নিজে নিজে সংকোচন-প্রসারণ করতে পারে। হৃদপিন্ডের এই বারবার হৃদস্পন্দনের ঘটনার সমষ্টিকে কার্ডিয়াক চক্র বলে। আমাদের শরীরের রক্ত গতিশীল থাকে কারণ হৃদপিণ্ড সবসময় সংকোচন-প্রসারণ করছে। কার্ডিয়াক চক্র টি চার ধাপে সম্পন্ন হয়।

রক্ত সঞ্চালনের পদ্ধতি

হৃদপিন্ডের সংকোচন প্রসারণ এর সময় হৃদপিন্ডের সংকোচনকে সিস্টোল এবং প্রসারণকে ডায়াস্টোল বলা হয়।

হৃদপিন্ডে অবস্থিত অলিন্দ দুটি প্রসারিত অবস্থায় থাকলে সারা শরীরের কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত রক্ত উর্ধ্ব ও নিম্ন মহাশিরা দিয়ে ডান অলিন্দে প্রবেশ করে এবং অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পালমোনারি শিরা দিয়ে বাম অলিন্দে প্রবেশ করে। সম্পূর্ণ এই প্রক্রিয়াটিকে অলিন্দের ডায়াস্টোল বলে।

এরপর ঘটে অলিন্দের সিস্টোল। অলিন্দের ডায়াস্টোলের ফলে অলিন্দ দুটি রক্ত পূর্ণ হয়ে যায় তখন হৃদপিণ্ড সংকুচিত হয় যার কারণে ডান অলিন্দ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড যুক্ত ডান নিলয় এবং বাম অলিন্দ থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত বাম নিলয়ে চলে আসে।

নিলয়গুলো রক্তপূর্ন হয়ে গেলে, তখন তা সংকুচিত হয়। এ সময় হৃদপিণ্ডে অবস্থিত বাইকাস্পিড ও ট্রাইকাস্পিড কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় একটা আওয়াজ হয়। যা শুনতে “লাভ” এর মতো। এবং এই সময় সেমিলুনার কপাটিকা খোলা থাকে।

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)

তখনি বাম নিলয় থেকে বিশুদ্ধ রক্ত(O2 রক্ত) মহাধমনির মাধ্যমে বিভিন্ন খাদ্য,পুষ্টিদ্রব্যসহ প্রয়োজনীয় উপাদান সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। একে নিলয়ের সিস্টোল বলে।
( রক্তের বিস্তারিত )

নিলয়ের সিস্টোল এর পর নিলয়ের ডায়াস্টোল শুরু হয়। এখানে আরেকটা শব্দ হয়। যার আওয়াজ “ডাব”।

হৃদপিন্ডের আওয়াজ

নিলয়ের সিস্টোল = লাব

নিলয়ের ডায়াস্টোল = ডাব

হৃদস্পন্দনের সময়

সম্পূর্ণ হৃদস্পন্দন হতে ০.৮ সেকেন্ড সময় লাগে। একজন স্বাভাবিক মানুষের মিনিটে ৬০-১০০ বার হৃদস্পন্দন হয়। এটাকে হার্ট – বিট বলে।

রক্তচাপ

রক্ত চলাচলের সময় ধমনির গায়ে একধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। ধমনির মাধ্যমে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় তরঙ্গ আকারে প্রবাহিত হয়। তখন ধমনিতে যে চাপ সৃষ্টি হয় তাকে রক্তচাপ বলে। হৃদপিন্ডের সংকোচন এর সময় ধমনীর চাপ সর্বাধিক থাকে এবং হৃদপিন্ডের প্রসারণ এর মাধ্যমে চাপ কমে যায়।

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)

চিকিৎসকদের মতে একজন পূর্নবয়স্ক মানুষের আদর্শ রক্ত চাপ ১২০/৮০। প্রথমটি হচ্ছে উচ্চমান, দ্বিতীয়টি হচ্ছে নিম্নমান। প্রথমটি সিস্টোলিক চাপ। যার আদর্শ মান ১২০ এর কম। দ্বিতীয়টি ডায়াস্টোলিক চাপ যার আদর্শ মান ৮০ এর কম।

উচ্চ রক্তচাপ

এর অপর নাম হাইপারটেনশন। রক্তচাপ যদি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন উচ্চ রক্তচাপ বলে। আনাদের দেশে বেশিরভাগ লোক এটিকে হাই প্রেশার বলে থাকে। হৃদপিণ্ড সংকোচন প্রসারনের সময় যদি, সিস্টোলিক চাপ ১৬০ বা তার বেশি হয়ে যায় এবং ডায়াস্টোলিক চাপ ৯৫ বা তার বেশি হয়ে যায় তবে এই মানুষের উচ্চ রক্তচাপ আছে।

চিন্তা, কম ঘুমানো, উত্তেজনা, বিষনতা,অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, মেদ বৃদ্ধি, শরীরের ওজন বৃদ্ধি হাইপারটেনশন হওয়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু হাইপারটেনশঅন কেন হয় তা এখনো জানা যায় নি। এটি শরীরের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটি হৃদ রোগের অন্যতম কারণ।

এটি প্রতিকার বা প্রতি রোধ করতে হলেঃ

১. ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখা
২. লবণ কম খাওয়া।
৩. চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা।
৪. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম যাওয়া।
৫. চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা
৬. নিয়মিত ব্যায়াম করা।
৭. প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাটা
৮. ধুমপান বর্জন করা।
৯. শর্করাযুক্ত খাবার কম খাওয়া

এছাড়াও অনেক নিয়ম মেনে চললে উচ্চ রক্তচাপ এড়ানো সম্ভব।

এর মধ্য দিয়ে রক্তের বিস্তারিত পর্ব সমাপ্তি ঘটল।

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-৩)

হৃদপিণ্ড কিভাবে রক্ত সঞ্চালন করে

রক্তের বিস্তারিত

Leave a Reply

Shopping cart

0
image/svg+xml

No products in the cart.

Continue Shopping