রক্তের বিস্তারিত (পর্ব-২)

রক্তের বিস্তারিত (পর্ব-২) Blood Details ( Bangla Part-2)

রক্তের খুটিনাটি পর্ব-২

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আমরা আমাদের রক্তের বিস্তারিত এর দ্বিতীয় পর্বে চলে এসেছি। যারা ১ম পর্ব পড়েনি তারা এখানে ক্লিক করুন।

১ম পর্ব

গত পর্বে আমরা রক্তের উপাদান সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আজ আমরা রক্তের অন্য দিক তুলে ধরার চেষ্টা করব।

রক্তের গ্রুপ

রক্ত নিয়ে আলোচনা করলে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, সেটি হচ্ছে রক্তের প্রকারভেদ। রক্তের গ্রুপ। আমরা সবাই মানুষ। আমাদের সবারই রক্তের রং একই। কিন্তু গ্রুপ কেন ভিন্ন? তাই এটা নিয়ে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)

রক্ত যা মানব শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদার্থ। তা সবার দেহে একই গ্রুপে থাকে না। একেক জনের শরীরে একেক রকম গ্রুপ। মোট চারটি গ্রুপ এবং প্রতিটি ২ টিতে করে ভাগ করা হয়েছে।

১.A
১.A+
২.A-

২.B
১.B+
২.B-

৩.AB
১.AB+
২.AB-

৪.O
১.O+
২.O-

পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে যে মানুষের শরীরের রক্তের লোহিত রক্ত কনিকায় দুই ধরনের এন্টিজেন পাওয়া যায়।
তারা হলোঃ
১. A
২. B

আবার লোহিত রক্ত কণিকা ছাড়া আরেকটি উপাদানে নতুন কিছু পদার্থ পাওয়া যায়। তা হলো রক্ত রসে দুই ধরনের এন্টিবডি পাওয়া যায়।
তারা হলোঃ
১. a
২. b

উল্লেখ্য যে এন্টিজেন ও এন্টিবডি এক নয়। আমরা দুইটিকে একই ভেবে বসে থাকি। এই জিনিসটি খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

এন্টিজেন ও এন্টিবডির মাধ্যমে গ্রুপ নির্ণয়ঃ

১. যাদের রক্তে A এন্টিজেন ও b এন্টিবডি আছে তাদের রক্তের গ্রুপ “A”

২.যাদের রক্তে B এন্টিজেন ও a এন্টিবডি আছে তাদের রক্তের গ্রুপ “B

৩.যাদের রক্তে A এবং B এন্টিজেন আছে কিন্তু কোনো প্রকার এন্টিবডি নেয় তাদের রক্তের গ্রুপ “AB”

৪.যাদের রক্তে কোনো এন্টিজেন নেয় কিন্তু a ও b এন্টিবডি আছে তাদের রক্তের গ্রুপ “O”

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)

রক্তের গ্রুপ  অ্যান্টিজেন (লোহিত রক্তকণিকা) অ্যান্টিবডি (রক্ত রস)
A A b
B B a
AB A,B নেই
O নেই a,b

যে রক্ত দেয় তাকে দাতা বলে যে রক্ত গ্রহণ করে তাকে গ্রহীতা বলে। দাতার শরীরে থাকা এন্টিজেন যদি গ্রহীতার এন্টিবডির সাথে বিক্রিয়া করে তাহলে অনেক ঝুঁকির সম্মুখীন থাকে তাই সবাই সবাইকে রক্ত দিতে পারে না।

যদি দাতা শরীরে থাকে অ্যান্টিজেন অ্যান্টিবডি সাথে বিক্রিয়া না করে তখন সে দাতা গ্রহীতা কে রক্ত দিতে পারবে। এর ভিত্তিতে গ্রুপ নির্ণয় করে রক্ত দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ নয়। নিচের ছকে কোন গ্রুপ কাকে রক্ত দিতে পারবে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

দাতা
  গ্রুপ O- O+ B- B+ A- A+ AB- AB+
 AB+   blood sign blood sign blood sign blood sign blood sign blood sign blood sign blood sign
AB- blood sign blood sign blood sign blood sign blood sign
 গ্র A+ blood sign blood sign blood sign blood sign
 হী A- blood sign blood sign
তা B+ blood sign blood sign blood sign blood sign
B- blood sign blood sign
O+ blood sign blood sign
O- blood sign

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)

উপরের ছক থেকে বুঝা যাচ্ছে ও নেগেটিভ রক্ত বিশিষ্ট ব্যাক্তি সবাইকে রক্ত দান করতে পারবে। তাই O গ্রুপ কে সর্বজনীন দাতা বলে।

এবং এবি পজেটিভ রক্ত বিশিষ্ট ব্যাক্তি সবাই থেকে রক্ত গ্রহণ করতে পারবে। তাই AB গ্রুপকে সর্বজনীন গ্রহীতা বলে।

যারা রক্ত দিতে পারবে

১.O- ব্যক্তি সবাইকে রক্ত দিতে পারবে।
২.O+ ব্যক্তি A+,B+,AB+,O+ কে রক্ত দিতে পারবে।
৩.A- ব্যক্তি A-,A+,AB-,AB+ কে রক্ত দিতে পারবে।
৪.A+ ব্যক্তি A+,AB+ কে রক্ত দিতে পারবে।
৫.B- ব্যক্তি B-,B+,AB-,AB+ কে রক্ত দিতে পারবে।
৬.B+ ব্যক্তি B+,AB+ কে রক্ত দিতে পারবে।
৭.AB- ব্যক্তি AB-,AB+ কে রক্ত দিতে পারবে।
৮.AB+ ব্যক্তি AB+ কে রক্ত দিতে পারবে।

যারা নিতে পারবে

১.AB+ ব্যক্তি সবাই থেকে রক্ত নিতে পারবে।
২.AB- ব্যাক্তি O-,A-,B-,AB- থেকে রক্ত নিতে পারবে।
৩.B+ ব্যাক্তি O-,O+,B-,B+ থেকে রক্ত নিতেবিশেষ পারবে।
৪.B- ব্যাক্তি O-,B- থেকে রক্ত নিতে পারবে।
৫.A+ ব্যাক্তি O-,O+,A-A+ থেকে রক্ত নিতে পারবে।
৬.A- ব্যাক্তি O-,A- থেকে রক্ত নিতে পারবে।
৭.O+ ব্যাক্তি O-,O+ থেকে রক্ত নিতে পারবে।
৮.O- ব্যাক্তি O- থেকে রক্ত নিতে পারবে।

Rh ফ্যাক্টর কি?

আমরা আমাদের রক্তের গ্রুপের সাথে +, – সহ বলি। + – কি? এটা দিয়ে রক্ত কিভাবে আলাদা হয়। রক্তের সাথে কিভাবে এটা সম্পর্ক যুক্ত? এসব প্রশ্ন সরারচর মনে না আসলে রক্ত নিয়ে পড়ালেখা করার সময় আমাদের মনের মধ্যে উকি দেয়। এটা নিয়ে এখন আমরা বিস্তারিত জানব।

তার জন্য জানার প্রয়োজন Rh ফ্যাক্টর কি?

রেসাস নামক এক ধরনের বানর আছে, যাদের লোহিত রক্ত কণিকায় এক ধরনের এন্টিজেন আছে যেটা মানুষের রক্তের লোহিত রক্ত কণিকায় পাওয়া যায়। অই বানরের নাম অনুসারে রেসার ফ্যাক্টর (Rhesus Fector) বা Rh ফ্যাক্টর নাম রাখা হয়।

এই এন্টিজেন যাদের শরীরে আছে বা পাওয়া যায় তারা Rh+, আর যাদের শরীরে নেই তারা Rh-

Rh ফ্যাক্টর অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নব-দম্পতির ক্ষেত্রে।

স্বামীর Rh+, স্ত্রীর Rh- হলেঃ

স্বামী স্ত্রীর ক্ষেত্রে, যদি স্বামীর Rh+ এবং স্ত্রীর Rh- হলে অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। স্বামী ও স্ত্রীর মিলনের সময়, স্বামীর দেহ থেকে কিছু Rh+ স্ত্রীর দেহে প্রবেশ করে। তাদের প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু দ্বিতীয় বার মিলনের ফলে আবার স্ত্রীর দেহে Rh+ প্রবেশ করে। আগের Rh+ সহ মিলে তারা দ্বিতীয় সন্তান জন্মদানে বাধা দেয়। তাই সেই দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান হয় না। হলেও দ্বিতীয় সন্তান রোগাক্রান্ত হয়।

স্বামীর Rh-, স্ত্রীর Rh+ হলেঃ

এক্ষেত্রে সন্তান জন্মদান সমস্যা থাকে না।

স্বামীর Rh+, স্ত্রীর Rh+ হলেঃ

এক্ষেত্রে সন্তান জন্মদান সমস্যা থাকে না।

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)

স্বামীর Rh-, স্ত্রীর Rh- হলেঃ

এক্ষেত্রে সন্তান জন্মদান সমস্যা থাকে না।

তাই বিবাহের আগে রক্ত পরীক্ষা করে নিলে সে দম্পতির ভবিষ্যতে সমস্যা হবে না।

রক্তের বাহক

রক্তের বাহকঃ যা রক্ত বহন করে অর্থাৎ রক্তকে দেহের একস্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত করে তাকে রক্তের বাহক বলে। সোজা বাংলায় এটি পাইপের মত কাজ করে।

রক্তের বাহক প্রধানত তিনটি

১. ধমনি
২.শিরা
৩.কৈশিক জালিকা

কিন্তু হৃদপিন্ড ও রক্ত বহনের কাজ করে বলে অনেকে এটাকে রক্তের বাহক হিসেবে ধরে। সে হিসেব মতে রক্তের বাহক চারটি

১. ধমনি
২.শিরা
৩.কৈশিক জালিকা
৪.হৃদপিন্ড

আমরা এখন ধমনি, শিরা, কৈশিক জালিকা সহ বিস্তারিত জানবো।

ধমনি

ইংরেজিতে একে artery বলে। এর প্রধান কাজ হলো, রক্তকে হৃদপিন্ড থেকে সারা দেহে পরিবাহিত করা। ধমনির প্রাচীন তিন স্তর বিশিষ্ট। ধমনিতে কোনো প্রকার কপাটিকা থাকে না। তিন স্তর বিশিষ্ট হওয়াতে এর নালিটী সরু।

হৃদপিন্ড সংকোচন হলে ধমনির মাধ্যমে রক্ত সারাদেহে সঞ্চালিত হয়। রক্ত এ সময় তরঙ্গের মতো চলাচল করে। যার কারণে ধমনি ও সংকুচিত এবং প্রসারিত হয়। এবং তা স্পন্দিত হতে থাকে। আমাদের কব্জিতে এই স্পন্দন পাওয়া যায়। যাকে নাড়ি স্পন্দন বলে।

সাধারণত ধমনি অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত হৃদপিন্ড থেকে সারাদেহে পরিবহন করে।

কিন্তু ব্যাতিক্রম ধর্মী একটি ধমনি রয়েছে যা হৃদপিন্ড থেকে ফুসফুসে কার্বন ডাই অক্সাইড রক্ত পরিবহন করে। এটি ব্যাতিক্রম কাজ করে বলে একে পালমোনারি ধমনি বলে।

চলবে……..

৩য় পর্বে যেতে এখানে ক্লিক করুন।

রক্তের বিস্তারিত (পর্ব-৩)

১ম পর্ব পুনরায় পড়তে এখানে ক্লিক করুন

রক্তের বিস্তারিত (পর্ব–১)

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)

রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-৩)

Leave a Reply

Shopping cart

0
image/svg+xml

No products in the cart.

Continue Shopping