রক্তের বিস্তারিত (পর্ব-১)

রক্তের বিস্তারিত (পর্ব-১) Blood Details ( Bangla Part-1)

রক্তের খুটিনাটি

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকের আলোচ্য বিষয় রক্ত।

সাধারণ ভাবে আমরা রক্ত বলতে বুজি যে, প্রানী দেহে যে লাল তরল পদার্থ থাকে তাই রক্ত। কিন্তু বৈজ্ঞানিক ব্যাখা এমন নয়।

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস 
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-৩)

রক্তঃ

রক্ত হচ্ছে দেহের মধ্যে একধরনের অসচ্ছ আন্তঃকোষীয় তরল যোজক কলা বা টিস্যু। যা মৃদু ক্ষারীয় ও লবনাক্ত

যারা বিজ্ঞানের ছাত্র তারা খুব সহজে বুজে যাবেন টিস্যু কি। কিন্তু অন্যরা তা বুজতে সামান্য সমস্যা হবে। তাই এখানে ক্লিক করে জেনে নিন টিস্যু কি।

এখন আসি

রক্তের কাজ কি?

রক্তের কাজ হচ্ছে সারা দেহের কোষে অক্সিজেন ও খাদ্য উপাদান নিয়ে যাওয়া বা সরবরাহ করা।

রক্তের মাধ্যমে দেহের একস্থান থেকে অন্য স্থানে খাদ্য,অক্সিজেন ও বর্জ্য পদার্থ (দূষিত পদার্থ) পরিবহন হয় বা আশা যাওয়া করে।

আমরা সহজে ভাবেই জেনে গেলাম রক্ত কিভাবে কাজ করে।

রক্ত কিসের মাধ্যমে সারা দেহে পৌছায়

রক্ত বাহিকার মাধ্যমে রক্ত সারাদেহে চলাচল করে। রক্ত বাহিকা হচ্ছে তাই যার সারা দেহে রক্ত আনা নেওয়া করে। সোজা বাংলায় বললে এইগুলো পাইপের মতো কাজ করে। আমরা অনেকেই একে বাংলায় রগ বলে থাকি। এইগুলো নিয়ে নিচে বিস্তারিত জানবো।

রক্তের রঙ লাল কেন?

রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিন নামক এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ থাকে, তাই রক্তের রঙ লাল

রক্ত কি দিয়ে তৈরি?

রক্ত ২ টি উপাদান দিয়ে তৈরি।
১. রক্ত রস
২.রক্ত কণিকা।

এইগুলোর বিস্তারিত নিচে দেওয়া হল।

রক্তের বিস্তারিত

রক্তের উপাদান

রক্তরস

এটি রক্তের অন্যতম উপাদান যা রক্তের ৫৫% দখল করে রয়েছে। অর্থাত রক্তের ৫৫ ভাগই রক্তরস। একে ইংরেজিতে প্লাজমা (Plasma) বলে। এর প্রধান উপাদান পানি। এছাড়াও এতে প্রোটিন বা আমিষ,অজৈব লবণ এবং জৈবযৌগ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।

আমরা যে খাবার গুলো খাই সেগুলো পরিপাক হয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রক্তরসের সাথে মিশে সারা দেহে পরিবাহিত হয়।

রক্ত রস নিয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

রক্ত কণিকা

সত্যি বলতে রক্ত কণিকার নামে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। যখন অণুবীক্ষণ যন্ত্র উন্নত হয় নি, তখন রক্ত রসের মধ্যে ভাসমান কিছু উপাদান দেখা যায়। সেগুলোকে তখন থেকে রক্ত কণিকা বলা হয়।

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস 
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-৩)

বর্তমানে অণুবীক্ষণযন্ত্র উন্নত হওয়ার পর দেখা যায় এগুলো কোষ। কিন্তু আগের প্রচলন অনুযায়ী এদেরকে এখনো রক্ত কণিকা নামে ডাকা হয়। এদিকে রক্ত কণিকার উপাদান আবার তিনটি

১.লোহিত রক্ত কণিকা
২.শ্বেত রক্তকণিকা
৩.অনুচক্রিকা

লোহিত রক্ত কণিকা

মানবদেহে তিন ধরনের কণিকা পাওয়া যায়, তার মধ্যে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বেশি। এটি ১২০ দিন পর্যন্ত বাচে। এর প্রধান কাজ হচ্ছে সারা দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করা। রক্ত যে উপাদানের কারণে লাল হয় সে উপাদান এই কণিকায় পাওয়া যায়।

সে উপাদানটির নাম হচ্ছে হিমোগ্লোবিন। হিমোগ্লোবিন লাল হওয়ায় রক্তের রং লাল। লোহিত রক্তকণিকা হিমোগ্লোবিন এর মাধ্যমে সারা দেহে অক্সিজেন পরিবহন করে থাকে। অক্সিজেনের সাথে হিমোগ্লোবিন যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন ধারণ করে।

লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি হয় লাল অস্থিমজ্জায়। এবং এটি জমা থাকে প্লীহা তে। এর মধ্যে কোন প্রকার নিউক্লিয়াস থাকে না। এর আকার নির্দিষ্ট। এটি দেখতে দ্বি অবতল গোলাকার বৃত্তীয়। লাল হয় বলে একে রেড ব্লাড সেল (Red blood cell) বলা হয়। একে সংক্ষেপে RBC বলে।

নারীর দেহে পুরুষের তুলনায় অনেক কম লোহিত রক্ত কণিকা পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি লোহিত রক্তকণিকা পাওয়া যায় শিশুর দেহে। আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে লোহিত রক্ত কণিকা ধ্বংস হয় এবং উৎপন্ন হয়। লোহিত রক্তকণিকা অক্সিজেন ছাড়াও কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে থাকে।

পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দেহে সাড়ে চার লাখ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ (৪.৫-৫.৫ লাখ) লোহিত রক্ত কণিকা থাকে। এবং পূর্ণ বয়স্ক নারীর দেহে থাকে চার থেকে পাঁচ লাখ (৪.০-৫.০ লাখ) পর্যন্ত। শিশুর দেহে ৬০ থেকে ৭০ লাখ এবং ৮০ থেকে ৯০ লাখ লোহিত রক্ত কণিকা থাকে।

লোহিত রক্ত কণিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

শ্বেত রক্ত কণিকা

রক্ত কণিকার অন্যতম উপাদান হচ্ছে শ্বেত রক্তকণিকা। লোহিত রক্ত কণিকার মত এদের নির্দিষ্ট কোন আকার নেই। সহজ বাংলায় বলতে গেলে এদের প্রধান কাজ হচ্ছে দেহের মধ্যে জীবাণু ধ্বংস করা। লোহিত রক্তকণিকা সকল প্রাণীর দেহে থাকলেও শ্বেত রক্তকণিকা শুধুমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দেহে থাকে।

এরা ১ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত বাচে। মানবদেহে প্রতি ঘনমিটারে ৪ থেকে ১০ হাজার শ্বেত রক্ত কণিকা থাকে।

এদের মধ্যেই হিমোগ্লোবিন না থাকায় এদের রং সাদা। তাই এদেরকে হোয়াইট ব্লাড সেল (white blood cell) বলা হয়ে থাকে। সংক্ষেপে WBC বলে।

এদের মধ্যে ডিএনএ (DNA) এর উপস্থিতি পাওয়া যায় এবং নিউক্লিয়াস ও রয়েছে

আমরা প্রতিনিয়ত অনেক ধরনের খাবার খাই এবং আমরা আমাদের এই পরিবেশে চলাফেরা করি যাতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অনেক ধরনের জীবাণু। এই জীবাণুগুলো আমাদের খাদ্য ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে আমাদের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে থাকে।

আমাদের শরীরে জীবাণু প্রবেশ করলে আমাদের দেহে শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যার কারনে জীবাণুগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস 
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-৩)

গঠনগতভাবে শ্বেত রক্তকণিকাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।

শ্বেত রক্তকণিকা নিয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

অণুচক্রিকা

রক্ত কণিকার তৃতীয় উপাদান হলো অণুচক্রিকা। ইংরেজিতে একে প্লেইটলেট (Platelet) বলে। অনুচক্রিকার কাজ হলো রক্ত জমাট বাঁধতে বা রক্ততঞ্চন করতে সাহায্য করা।

দেহের কোন অংশ কেটে গেলে অণুচক্রিকা সক্রিয় হয়। অনুচক্রিকা গুলো থ্রম্বোপ্লাস্টিন নামে এক ধরনের পদার্থ তৈরি করে যা রক্তের মধ্যে থাকা প্রোথ্রম্বিনকে থ্রম্বিনে রূপান্তর করে। থ্রম্বিন তখন রক্ত রসের ফ্রাইবিনোজেনকে একটি জালকে রূপান্তর করে যাকে ফ্রাইবিন জালক বলে।

ব্লব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস 
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-৩)

ফ্রাইবিনোজেন দ্রুত সুতার মত জাল সৃষ্টি করে ফ্রাইবিন জাল তৈরি করে, যা রক্তকে দেহের বাহিরে যেতে বাধা দেয়। এভাবে অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বা তঞ্চন করায়। রক্ত তঞ্চনের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে ভিটামিন K ও ক্যালসিয়াম আয়ন।

অণুচক্রিকা ৫-১০ দিন বাচে। প্রতি ঘন মিলি লিটারে অনুচক্রিকা আড়াই লাখের মতো থাকে।

অনুচক্রিকা না থাকলে দেহের কোনো অংশ কেটে গেলে তা আর রক্ত জমাট বাধত না। এতে মানবদেহের অনেক ক্ষতি হত।

অনুচক্রিকা নিয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

চলবে………..

২য় পর্বে যেতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারদের জন্য প্রয়োজনীয় টুলস 
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-৩)

Leave a Reply

Shopping cart

0
image/svg+xml

No products in the cart.

Continue Shopping