খাদ্য ও পুষ্টি নিয়ে আলোচনা (পর্ব – ২)
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আমরা শুরু করতে যাচ্ছি খাদ্য ও পুষ্টির বিস্তারিত আলোচনা (পর্ব – ২)
পর্ব -১ পড়তে এখানে ক্লিক করেন ।
আমাদের এর আগে আলোচ্য বিষয় ছিল রক্তের বিস্তারিত, যারা পড়েনি তারা এখানে ক্লিক করে পড়ে আসতে পারেন।
গত পর্বে আমরা খাদ্য কি, খাদ্যের উপাদান, শর্করা এবং আমিষ সম্পর্কে জানতে পেরেছি । আজকে স্নেহ , ভিটামিন সম্পর্কে জানতে পারবো।
এখন আমাদের আজকের বিষয় নিয়ে শুরু করি।
গ. স্নেহ
স্নেহপদার্থ তৈরি হয় গ্লিসারল এবং ফ্যাটি এসিড দ্বারা। ফ্যাটি এসিড এবং গ্লিসারোল মিলে স্নেহ পদার্থ তৈরি হয়। আমাদের দৈনন্দিন খাবারে প্রায় 20 ধরনের ফ্যাটি এসিড দেখা যায়। আমরা যেগুলোকে চর্বি হিসেবে দেখি এগুলো আসলে কঠিন স্নেহপদার্থ।
চর্বিকে সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড বলা হয়ে থাকে। সাধারণ কক্ষতাপমাত্রায় বা সাধারণ তাপমাত্রায় এগুলো কঠিন অবস্থায় অর্থাৎ চর্বি অবস্থায় থাকে। যেমনঃ মাংস এবং মাছের ছবি। সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড ছাড়াও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড দেখা যায়।
অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। এই অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড অর্থাৎ এই তরল অবস্থা কে আমরা তেল বলে থাকি।
আরো পড়ুনঃ
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)
যেমনঃ আমাদের ব্যবহৃত সোয়াবিন তেল, সরিষার তেল, সূর্যমুখী তেল। প্রোটিনের মত স্নেহ পদার্থের দুটি উৎস রয়েছে। তাই উৎস অনুযায়ী স্নেহপদার্থ দুই প্রকার।
১.প্রাণিজ উৎস
২.উদ্ভিজ্জ উৎস
১.প্রাণিজ উৎস
যেসব স্নেহ প্রাণীর দেহ থেকে পাওয়া যায় তাদেরকে স্নেহের প্রাণিজ উৎস বলে। আমরা অনেক ধরনের প্রাণীজ উৎস হচ্ছে দেখে থাকি। তার মধ্যে চর্বিসহ মাংস, আলাদা চর্বি, মাখন, পনির, ঘ, ডিমের কুসুম, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
২.উদ্ভিজ্জ উৎস
যেসব স্নেহ উদ্ভিদের দেহ থেকে পাওয়া যায় তাদেরকে স্নেহের উদ্ভিজ্জ উৎস বলে। প্রাণিজ উৎস এর মত উদ্ভিজ্জ উৎস অনেকভাবে দেখে থাকি আমরা। তবে বেশিরভাগ উদ্ভিজ্জ উৎস তরল আকারে বা তেল আকারে থাকে। তেলের মধ্যে সরিষা সোয়াবিন তিল তিসি ভুট্টা নারিকেল সূর্যমুখী পাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম এবং চিনাবাদাম ও স্নেহ পদার্থের ভালো উৎস।
স্নেহ পদার্থের কাজ
১.আমরা দৈনন্দিন যেসব খাদ্যবস্তু খেয়ে থাকি সেসব খাদ্যবস্তুর মধ্য থেকে স্নেহপদার্থ বেশি তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে।
২. দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য স্নেহের বিকল্প অপরিসীম।
৩. স্নেহকে দেহের খাদ্যা ভান্ডার হিসেবে অবহিত করা হয়।
৪. তাপের অপচয় বন্ধ করতে স্নেহ প্রধান ভুমিকা পালন করে এবং ভবিষ্যতের খাদ্যাভান্ডার হিসেবে কাজ করে।
৫. চর্মরোগ প্রতিহত করতে সাহায্য করে এবং ত্বক মসৃণ করে ও সজীব রাখে।
৬. স্নেহজাতীয় পদার্থে দ্রবণীয় ভিটামিন গুলো অর্থাৎ ভিটামিন ( A, D, E এবং K ) শোষণে সাহায্য করে।
অভাবজনিত রোগ ও প্রতিকার
বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ, একজিমা স্নেহ পদার্থের অভাবে হয়ে থাকে। ত্বক শুষ্ক ও খসখসে করে সৌন্দর্য নষ্ট করার পিছনে স্নেহ পদার্থ দ্বায়ী। স্নেহের সাথে প্রোটিনের সংযোগ থাকায় দীর্ঘদিন স্নেহ পদার্থের অভাবে শরীরে জমে থাকা আমিষ বা প্রোটিন ক্ষয় হতে থাকে যার ফলে শরীরে ভর ( ওজন ) কমে যায়। আবার অতিরিক্ত স্নেহ পদার্থ শরীরে জমা হলে, তা যদি ব্যায় না হয় তাহলে দেহে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে এবং মেদ বৃদ্ধি পায়। মেদবহুল শরীরে রোগ সহজে আক্রমন করে।
ঘ.খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন
আমরা প্রতিনিয়ত যা খেয়ে থাকি তা খাদ্য। আমরা আগেই জেনেছি খাদ্যে অনেক উপাদান থাকে, তারমধ্যে প্রধান শর্করা বা শ্বেতসার, আমিষ ও স্নেহ। পূর্বে আমরা তা জেনেছি। কিন্তু খাদ্যে পরিমাণমতো শ্বেতসার বা শর্করা, স্নেহ ও আমিষ উপস্থিত থাকার পর ও আমাদের জীবের সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি এবং পুষ্টির জন্য বিশেষ একধরনের খাদ্য উপাদানের প্রয়োজন হয়, যা ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ নামে অবহিত করা হয়।
ভিটামিনকে বাংলায় খাদ্যপ্রাণ বলা হয়। প্রাণীর স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি এবং শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন ভিটামিন। ভিটামিন হচ্ছে এক ধরনের জৈব যৌগ। কিন্তু এটি যৌগিক যৌগ। তাই একে জৈব যৌগিক যৌগ বলে। ভিটামিনের জন্য আলাদা খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন হয় না। আমরা দৈনন্দিন যে খাবার খাই তা স্বাস্থ্য সম্মত হলে তাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকতে পারে। যেমনঃ শাক- সব্জিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-৩)
ভিটামিন তরল পদার্থে দ্রবনীয়। তবে সব ভিটামিন পানিতে দ্রবণীয় নয়। কিছু ভিটামিন পানিতে দ্রবণীয় হলেও কিছু স্নেহ পদার্থে দ্রবণীয়।
স্নেহে দ্রবণীয় ভিটামিনঃ ভিটামিন A, ভিটামিন D, ভিটামিন E ও ভিটামিন K ।
পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনঃ ভিটামিন B কমপ্লেক্স , এবং ভিটামিন C।
স্নেহে দ্রবণীয় ভিটামিনঃ
ভিটামিন A
আমরা জানি মানুষের খাদ্যের উৎসের মধ্যে দুই ধরনের খাদ্যের উৎস রয়েছে।
১. প্রানিজ উৎস
২. উদ্ভিজ উৎস
ঠিক একই ভাবে ভিটামিন A তে ও দুইটি উৎস থাকে।
১. প্রানিজ উৎস
প্রানিজ উৎসের মধ্যে যেকোনো ডিম, গরুর দুধ, ছানা, ঘি, মাখন, দই, যকৃত, বিভিন্ন তেল সমৃদ্ধ মাছে, বিশেষ করে সমুদ্রের কড মাছে প্রচুর পরিমানে ভিটামি A পাওয়া যায়।
২. উদ্ভিজ উৎস
উদ্ভিজ উৎসের মধ্যে ক্যারোটিন সমৃদ্ধ শাক- সবজি, যেমন- লালশাক, কচুশাক, পাটশাক, পুই শাক, ডাটা শাক, পুদিনা পাতা, কলমি শাক, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, মটরশুঁটি, বাঁধাকপি এবং বিভিন্ন ধরনের ফলমূল যেমনঃ পাকা পেঁপে, কাঁঠাল, আম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-৩)
ভিটামিন এর কাজ
১ . দেহের বর্ধন ও স্বাভাবিক গঠন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার কাজ করে ।
২. দেহের বিভিন্ন আবরণী কলা যেমন ত্বক, চোখের কর্নিয়া ইত্যাদিকে সজীব ও স্বাভাবিক রাখে।
৩. হাড়, দাঁতের মাড়ি এবং দাঁতের গঠন সুস্থ রাখে
৪. দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে
৫. দেহে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে
অভাবজনিত রোগ ও এর প্রতিকার
ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়ে থাকে। যদি রাতকানা রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে চোখের কর্নিয়ার আলসার হতে পারে এ অবস্থাকে জেরপথ্যালমিয়া রোগ বলে। এই জেরপথ্যালমিয়া রোগের কারণে মানুষ পুরোপুরি অন্ধ ও হয়ে যেতে পারে। ভিটামিন এ এর অভাবে দেহের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে এবং অনেক সময় সর্দি, গলা ব্যথা, কাশি ইত্যাদি অসুখ দেখা যেতে পারে। ভিটামিন এ এর অভাবে ত্বকের লোমকূপের গোড়ায় ছোটো ছোটো গুটি সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও ভিটামিন এ এর অভাবে দেহের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
খাদ্য ও পুষ্টি এর পরবর্তী পর্ব
২য় পর্ব
১ম পর্ব
পূর্বের পোস্টঃ
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-১)
রক্ত নিয়ে বিস্তারিত জানুন (পর্ব-২)